আমতলী প্রতিনিধিঃ
মাত্র ১০ কেজি চালের জন্য চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সাগর এর ছুরিকাঘাতে নিহত হলো নুরুল ইসলাম নামের এক কৃষক। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত আলানুর মুন্সি ও তার মা আলেয়া বেগমকে পুলিশ আটক করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে আমতলী উপজেলার সেকান্দারখালী গ্রামে নিষ্ঠুর এ ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার সেকান্দারকালী গ্রামের আলমগীর মুন্সির (৪৮), মা আলেয়া বেগম (৬০), চাচাতো ভাসুরের ছেলে নুরুল ইসলাম মুন্সির স্ত্রী রানী বেগমের কাছ থেকে গত বছর ১০ কেজি চাল ধার নেয়। ওই চাল গত এক বছর ধরে পরিশোধ করেনি আলেয়া বেগম। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে চাচি শ্বশুড়ী আলেয়া বেগমের কাছে ওই চাল আনতে যায় রানী বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয় উঠে চাচি আলেয়া বেগম।
এ ঘটনার কিছুক্ষন পরে চাচি আলেয়া বেগমের ছেলে আলানুর মুন্সি, নাতী সাগর মুন্সি ও জামাতা খলিল শিকদার দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নুরুল ইসলামকে মারতে উদ্ধত হয়। এ সময় নুরুল ইসলাম মুন্সির ছোট ভাই হাসান মুন্সি আলানুরকে থামিয়ে দেয়। আলানুরের ছেলে সাগর মুন্সি দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে চাচা নুরুল ইসলাম মুন্সির পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় বলে নিহতের ছোট ভাই হাসান মুন্সি আমাদের জানায়।
এতে সহযোগিতা করেন আলেয়া ও তার দু’মেয়ে খালেদা ও আসমা। নিহতের বোন মিনারা ও বিলকিস বেগম এসব তথ্য জানিয়েছেন। ওই সময় ছুরিকাঘাত করেই পালিয়ে যায় অপরাধীরা। আহত নুরুল ইসলামকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে তার স্বজনরা। পরে ওই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিমাদ্রী রায় আহত নুরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ হাসপাতাল থেকে নিহত নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে ময়নতদন্তের জন্য বরগুনা সরকারি হাসপাতালের মর্গে পঠিয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত আলানুর মুন্সি ও তার মা আলেয়া (৬০) বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুুতি চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, আলানুর মুন্সির বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি ও তার ছেলে সাগর এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। নুরুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় বিচার দাবি করেন তারা।
নিহত নুরুল ইসলাম মুন্সির স্ত্রী রানী বেগম বলেন, চাচি আলেয়া বেগম গত বছর ১০ কেজি চাল ধার নেয়। ওই চাল এক বছরেও পরিশোধ করেনি। বৃহস্পতিবার সকালে আমার ঘরে চাচি আসলে আমি ওই ধার নেয়া চাল তার কাছে চাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তার ছেলে আলানুর, নাতি সাগর, জামাতা খলিল শিকদার, মেয়ে খালেদা ও আসমাকে পাঠিয়ে দেয়। তারা এসে আমার স্বামীকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নিহত নুরুল ইসলাম মুন্সির ছোট ভাই হাসান মুন্সি বলেন, আলানুর বগি নিয়ে আমার ভাইকে মারতে আসে। আমি ওই বগী তার হাত থেকে টেনে নেই, কিন্তু তার ছেলে সাগর মুন্সি ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে আমার ভাইয়ের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। এতে আমার ভাই গুরুতর আহত হয়। ভাইকে হাসপাতালে আনার পরে চিকিৎসকরা মৃত্যু ঘোষণা করেছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ হিমাদ্রী রায় বলেন, নিহত নুরুল ইসলাম মুন্সির পেটের পাশে ধারারো অস্ত্রের আঘাতের চিহৃ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার পেটের নাড়িভুড়ি কেটে গেছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, নিহত নুরুল ইসলাম মুন্সির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত আলানুর মুন্সি ও তার মা আলেয়া বেগমকে আটক করা হয়েছে।